পবিত্র মক্কা মদিনার দিনগুলি : (পর্ব ১৩)

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ মুজিবুল হক ০২ মার্চ, ২০১৬, ০১:২৮:৫৫ রাত

... আজ ১৮ই জিলহজ্ব ৩রা নভেম্বর ২০১২ শনিবার. আমি আর মা মাগরিবের নামাজের অনেক আগেই পবিত্র মসজিদুল হারামের "বাব আল ওমরা" দিয়ে প্রবেশ করে মাকে মসজিদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে দিয়ে আমি পবিত্র মসজিদুল হারামের অন্য প্রান্তে চলে আসি. মায়ের সাথে আমাদের কাফেলার মহিলা হাজীরা ছিলেন তাই চিন্তামুক্ত ছিলাম. হাঁটতে হাঁটতে "বাব আল সাফা" পর্যন্ত চলে আসি তখন মাগরিবের নামাজের আরো প্রায় ৩০ মিনিট বাকী আছে, হঠাৎ "তরিক, ইয়া আল্লাহ তরিক" (অর্থাৎ চলার রাস্তা দাও) শব্দ শুনে চমকে উঠলাম. দেখলাম একদল লোক খাটিয়ায় করে একটি লাশ নিয়ে এদিকে আসছে তাদের সবার বেশভূষায় সৌদী নাগরিক বলে মনে হলো তারা লাশটি নিয়ে একটি অপেক্ষাকৃত ছোট প্রবেশ পথ দিয়ে মসজিদুল হারামের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লো. এর কয়েক মিনিট পর আবার একই শব্দ এবার একটি নয় এক সাথে চারটি লাশ এলো আমি বুঝতে পারলাম মাগরিবের নামাজের পর এদের জানাজা হবে. আসলে আমি এতদিন খুঁজছিলাম লাশগুলি কোন পথ দিয়ে ঢোকায় এবং কোন পথ দিয়ে বের করে. চারটি লাশই ১০ নাম্বার প্রবেশ পথ "বাব আল ইসমাইল" দিয়ে প্রবেশ করে সেই সাথে অন্যান্য মুসল্লীদের ন্যায় আমিও একটি লাশ কাঁধে নিয়ে তাদের সাথে ঢুকে পড়ি.অতপর মসজিদুল হারামের একটি নির্দিষ্ট স্হানে লাশগুলি সারিবদ্ধ ভাবে রাখা হয় আমরা যারা লাশ বহন করছিলাম তারা সবাই লাশগুলি রেখে যখন বাইরে অথবা অন্য স্হানে চলে যেত উদ্যত হয়েছিলাম তখন সেখানে বসা কয়েকজন সৌদি নাগরিক আমাদের অন্য স্হানে না গিয়ে সেখানেই বসে থাকতে বলেন তাদের দেখে অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও অভিজাত বলে মনে হলো. হয়তোবা এই ভদ্রলোকেরা বড় রাস্ট্রিয় কর্মকর্তা অথবা সৌদি রাজবংশের কেউ হবেন. আমাদের অত্যন্ত আদবের সাথে তাদের কাতারে বসালেন. উল্লেখ্য ওই স্হানটির চারপাশে মোটা দড়ি দিয়ে ঘেরা ছিল এবং মসজিদের অন্যান্য স্হানের মত এখানে সবার প্রবেশাধিকার নেই বলে অনেকটা ফাঁকা. মাগরিবের আজান হলো এবং নামাজ পড়া সম্পন্ন হলো

কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত মসজিদুল হারামের সন্মানিত ইমাম শায়খ মেহের আল মুয়াইকলি

এক সময় দেখলাম মসজিদুল হারামের ইমাম জনাব "শায়খ মেহের আল মুয়াইকলি" সুসজ্জিত অস্ত্রধারী পুলিশ বেষ্টিত হয়ে এদিকে আসছেন তিনি আসার আগেই সবাই দাড়িয়ে গেলেন. ইমাম সাহেব আসার আগে জানাজার নামাজের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল. তিনি আসা মাত্রই জানাজার নামাজে দাড়িয়ে গেলেন আর আমি দাড়ানো ছিলাম ইমাম সাহেবের ঠিক পিছনে.



মসজিদুল হারামে জানাজা ও লাশের সারি

জানাজার নামাজ শেষে ইমাম সাহেব ঐ স্হানে উপস্হিত মুসল্লীদের সাথে করমর্দন করলেন আর শ্রদ্ধেয় ইমাম সাহেব জনাব শায়খ মেহের আল মুয়াইকলিকে সামনা সামনি দেখতে পেয়ে ও হাত মিলাতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করলাম. এর পর লাশগুলি নিয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম. লাশ বহনকারী কর্মীরা আমাদের ধন্যবাদ জানিয়ে লাশগুলি নিয়ে গেল.. এরপর এশার নামাজ পড়ে মাকে নিয়ে হোটেলে আসার সময় সব বিস্তারিত মাকে জানালে তিনিও জানাজার নামাজ কোথায় ও কিভাবে হয় তা দেখার ইচ্ছা পোষন করেন আমি আরেক দিন কাবা শরীফে আসলে কাছে থেকে দেখাব বলে মাকে কথা দিই তার পর আমরা হোটেলে ফিরে আসি রাতের খাবার খেয়ে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে রাত ১১টায় গোসল সেরে এহরাম পরিধান করি আমি ও আমার মা ইসমাইল ইমতিয়াজের মা সহ মোট ছয় জন মসজিদুল আয়েশার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই বাস স্টপেজে আসতেই সাফটকো'র বাস এসে গেল আমরার বাসে উঠার পর দেখি একটি আসন ও খালি নাই বেশির ভাগই তুর্কী হাজীতে বাসটি পরিপূর্ণ এক হাজী আসন ছেড়ে আমার মাকে বসতে দিলেন তার দেখাদেখি আরো দুইজন পুরুষ হাজী ইসমাইল ও ইসমাইল ইমতিয়াজের মাকে আসন ছেড়ে দিলেন তাদের এই বদান্যতায় আমরা অভিভূত হয়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভূল করলাম না মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে আমরা মসজিদুল আয়েশায় পৌঁছে যাই ওখানে নামাজ আদায় করে নিয়ত শেষে আবার সাফটকো'র বাস মসজিদুল হারামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই. মসজিদুল আয়েশায় ওমরা হজ্ব প্রত্যাশী হাজীর প্রচুর সমাগম দলে দলে এক এক বাস আসছে আর যাচ্ছে. একদল ভারতীয় মনিপুরের হাজীর সাক্ষাত পেলাম আলাপ জমাতে চাইলাম দুঃখের বিষয় ব্যর্থ হলাম কারন তারা বাংলা হিন্দী উর্দূ আরবী বা ইংরেজী কিছুই বুঝেনা একমাত্র মনিপুরি ছাড়া. আমরা বাসে উঠে বসে পড়ি এবং অল্প সময়ের মধ্যেই মসজিদুল হারামের সামনে পৌঁছি তার পর নামাজ শেষে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করে তাওয়াফ ও সাই সম্পন্ন করে মিশরীয় সেই সেলুনে মাথা মুন্ডন করে হোটেলে আসি তারপর গোসল শেষে এহরাম মুক্ত হই. আজ আমি আমার বাবার ওমরাহ পালন করেছি আর মা বোধহয় আমার দাদীর ওমরাহ পালন করছেন. রাত প্রায় তিনটায় আমি আর ইসমাইল আবার মসজিদুল হারামে আসি লক্ষ্য একটাই তাহাজ্জুদ ও ফজর নামাজ পড়েই হোটেলে ফিরব মাকে নিলামনা কারন যেদিন ওমরাহ পালন করি সেদিন মা মসজিদুল হারামে না এসে হোটেলেই তাহাজ্জুদ ও ফজর নামাজ পড়েন.



বাব আল ওমরা (আল ওমরা গেইট)

পবিত্র মসজিদুল হারামের একটি প্রবেশ পথ "বাব আল মালিক আবদুল আজিজ" পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারাম ও পবিত্র মদিনার মসজিদে নববীতে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরত্ব অপরিসীম তাই রাত দুপুরেই অন্যান্য নামাজের ওয়াক্তের মত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য হাজির হন. পার্থক্য শুধু একটাই অন্যান্য নামাজের ওয়াক্তে আজানের পর জামাতে নামাজ আদায় করা হলেও তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আজান হয় তবে জামাত হয়না একাকী আদায় করতে হয়. প্রায় সব মুসল্লীই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় শেষে ফজর নামাজ পড়েই মসজিদ থেকে বের হন. আর আমরা যারা ওমরাহ করতাম সময় সংকুলান না হলে ঐ দিন মসজিদুল হারামে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া হতো না. আর তাই দ্রুত ওমরাহ সম্পন্ন করার চেষ্টা করতাম....

বিষয়: বিবিধ

১০২০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

361033
০২ মার্চ ২০১৬ রাত ০৪:১৬
শেখের পোলা লিখেছেন : ফ্লাইট মিস করলেন মনে হয়৷
361053
০২ মার্চ ২০১৬ সকাল ১০:৩৭
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : যেটা শিরোনাম সেটাই পোস্ট!!!! ঘটনা কি?
361058
০২ মার্চ ২০১৬ সকাল ১১:০৯
মোহাম্মদ নূর উদ্দীন লিখেছেন : মক্কা মদীনার গল্প শুনতে এসে দেখি পুরো শহর ফাঁকা !!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File